রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোকে রাষ্ট্রের উপাদান গুলিতে ভুখণ্ড, জনগণ,সরকারও সার্বভৌমত্ব এই চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ থাকলেও রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় চরিত্রের ছোঁয়া নেই। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য,শাসন ব্যবস্তায় গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা,ন্যায়পরায়ণতা, সমতা ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোথাও ঘুণাক্ষরে ধর্মীয় ও দলীয় প্রাধান্যতার কথা উল্লেখ নেই। তাছাড়া ধর্ম,ভাষা,খাদ্যাভ্যাস,সংস্কৃতি,মত-পথের বৈচিত্রতা ও ভিন্নতার জন্য দুরদর্শী জাতীয় নেতৃত্বরা কোন বিশেষ জনগোষ্টীর পক্ষপাতিত্ব না করে #জাতীয়তার পরিচায়ক হিসাবে শুধুমাত্র #ভারতীয় শব্দটিকে বেছে নিয়েছিলেন। ঠিক সেইভাবে রাষ্ট্রের নামকরনেও প্রশংষনীয় দুরদর্শীতার পরিচয় দিয়ে গেছেন।
রাষ্ট্রপ্রেম বা রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের মাপকাটি কোন রাজনৈতিক দলের আনুগত্যের উপর নির্ভর করতে পারেনা বা নির্দেশনা দিতে পারেনা,তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তদরুপ, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাও দেশ প্রেমের নির্ণায়ক নয়। রাজনৈতিক দলগুলি রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় আসবে যাবে, তাদের কোন স্থায়িত্ব নেই, কারন তারা জনগণের আস্তার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক,ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে অস্তিত্ব ধরে রাখে, জনগণ সেই বৈশিষ্টাবলীর উপর বিশ্বাস করে দেশকে ভালবেসে যায়,দেশের উন্নতির জন্য নিজের প্রাণ বিলিয়ে দেয়।
ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমের সংঘাকে এক বিশেষ সংগঠণের ছত্রছায়ায় পালিত রাজনৈতিক দলের স্বঘোষিত দেশভক্তরা সীলমোহর দিচ্ছে। আপনি যদি আরএসএস,বিজেপি বা সরকারের কোন কাজের সমালোচনা করেন বা এর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করেন তাহলে আপনি যেই হোন দেশদ্রোহী, এমনকি বৈধ নাগরিকত্ব থাকলেও হয় পাকিস্থানী নতুবা বাংলাদেশী। তাদের মর্জির উপর নির্ভর করছে আপনার দেশপ্রেম ও নাগরিকত্ব।
ভারতবর্ষে আরো এক নতুন আবিষ্কার, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানে আপনি দেশপ্রেমিক ও ভারতীয়। ধর্মীয় সংখ্যালগিষ্ঠ মানে আপনার দেশপ্রেম ও নাগরিকত্বে প্রশ্নচিহ্ন।
কিন্তু কেন ? এ দেশে কি বংশ পরম্পরায় আমরা ছিলাম না ? নাকি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি ? এ দেশকে স্বাধীন করতে আমাদের লক্ষ প্রাণ কি উৎসর্গিত হয় নাই ? স্বাধীনতার লড়াইয়ে কি আরএসএসের কর্মীদের মতো ঈংরেজদের পক্ষে কি আমাদের অবস্থান ছিল ? কেন এ দেশে আমার ধর্ম পরিচয়ে আমাকে নিয়ে সন্দিহান ? কে দেবে এর উত্তর ?
#রুহুল_কুদ্দুস
১২-১১-২০১৭