নাগরিকত্ব ও সাধারণ ভাবনা

2 minute read
1

 বর্তমান সময়ে NRC বহুল আলোচিত বিষয়।পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের তথ্বাবদানে নাগরিকত্ব নিবন্ধীকরনের কাজ চলছে, তাই ভাষাগত বা ধর্মীয় পক্ষপাতিত্বের সওয়াল করা অমুলক বা আইনত অপরাধ।


নাগরিকত্ব বিষয়টি সাংবিধানের ২য় অধ্যায়ের ধারা ০৫ থেকে ১১ পর্যন্ত লিপিবদ্ধ। ভারতীয় সংবিধানের রক্ষক সুপ্রীম কোর্ট, তাই নাগরিকত্ব বিষয়ে যে কোন সমস্যার চুড়ান্ত সমাধানের ক্ষমতা সর্বোচ্চ আদালতের হাতে। রাজনৈতিক দলের এক্তিয়ারভুক্ত নয় বিষয়টি। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো নিজের আখের গোছাতে বিভিন্ন বাদানুবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।


স্বাধীনতার পর থেকেই আসামের জলন্ত সমস্যা নাগরিকত্ব। বাংগালী জাতিকে বিলীন করে দিতে আসামী জাতির অস্তিত্ব রক্ষার বাহানায় ৮০র দশকে আসু আন্দোলনে বাংগালী খেদা বা বাংলাদেশী মুসলিম খেদা, জাতিয়তাবাদের নামে আলফা'র সহিংসতা, তাররপর আসাম চুক্তির মাধ্যমে অগপ'র দীর্ঘ ১০ বছরের রাজপাট, এসব কিন্তু নাগরিকত্ব সমস্যার করতে পারেনি বা তারা চায়নি স্থায়ী সমাধান হোক। জানমালের ক্ষয়, দীর্ঘ বঞ্চনা স্বীকার করেও বাংগালী জাতি চেয়েছিল সমস্যার সমাধান হোক, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধীর ঘোরপেচে পড়ে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আরো জটিল হয়ে উঠেছে।


কংগ্রেস আমলের ১৫ বছরের প্রথমাবর্তে আদালত আইএমডিটি বাতিলের মাধ্যমে যখন বিতর্কের স্থায়ী মিমাংসায় হস্তক্ষেপ করার জন্য এগিয়ে আসে, ভুক্তভোগী জনগন আশার আলো দেখেছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের রাজ্য বিধান সভার ৯সদস্যের ক্যাবিনেট কমিটির আদালতে পেশ করা OI, NOI রিজলিউশন নাগরিকত্ব বিতর্ককে আরো উসকে দেয়। আসামি ভাষিক সেন্টিমেন্ট ভোটের বাজারে ধরে রাখার জন্য কংগ্রেস সরকার বিভাজনের খেলায় মেতে উঠে। দীর্ঘ ১৫ বছরে সমস্যার সমাধান করেনি, তাদেরও শেষ রক্ষা হয়নি। 


২০১৬ রাজপাটের গদি পাল্টে চলে আসে বিজেপি'র হাতে। কংগ্রেসী ভাষিক বিভাজনের খেলাকে হাতিয়ার করে ''সুইর নাল দিয়ে ফাল'' করে দেয় বিতর্ককে। RSS নেতারা অবৈধ হিন্দু বাংলাদেশীদের ভারতে বৈধতা দেয়ার লুক্কায়িত বাসনায় দীর্ঘ সময় ধরে নাগপুর থেকে আসামে এসে বাংলাভাষী স্থায়ী বৈধ মুসলমানদের বাংলাদেশী তকমা দিয়ে আরেক বিভাজনের খেলায় মেতে উঠে। ভোট রাজনীতির সরল সমীকরনের জন্য নাগপুরী ফরমানে বিজেপিও সুর মিলিয়ে শুরু করে কৌটিল্যের রাজনীতি। 


আগামী নির্বাচন গুলোতে বাজিমাত করতে বিজেপি'র প্রয়োজন আসামি ও বাংগালী হিন্দু জনমত। কারন উন্নয়ণ তো শিকেয় তুলে রেখেছে ,শুধু সংস্কৃতি চর্চায় সরকার সীমাবদ্ধ। তারজন্য প্রয়োজন তরতাজা কোন বিতর্ক। তাই প্রতীক হাজেলাকে শিখণ্ডী করে পুরোনো শাখে শান দিচ্ছে বিজেপি। যার প্রমাণ বিধায়ক শিলাদিত্যের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক কাষন ।


ইতিমধ্যে সরকার বাহাদুর সনোয়ালজী বিজ্ঞপ্তীর মাধ্যমে কোন তালিকায় #ঐই, #নই থাকবেনা বলে ঘোষনা দেন। আসলেই কি তত সহজ? না থাকলে কি সব সমস্যার সমাধান হবে ? তবে কেন আসামী জাতিয়তাবাদি আন্দোলন ? হাজেলা আদালতকে ঐই নই বেছে করার হলফনামা দিয়ে এসেছেন, সরকার বলছে থাকবে না। বিষয়টি আমাদের কাছে আপাতবিরুদ্ধ। যদি নাইবা থাকবে তবে প্রশাষনিক কড়া সতর্কতা কেন ?


আরো আশ্চর্যের বিষয় যা সম্পুর্ণ অগণতান্ত্রিক। বিগত তিনদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষনে কড়া বার্তা দিয়ে ভয় দেখান যে যারা বর্তমান নাগরিকত্ব নিবন্ধিকরনের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদেরকে দেশ বিরোধী হিসাবে গন্য করা হবে।


সুপ্রীমকোর্টের নিয়মানুযায়ী যদি সম্পুর্ণ রুপে নাগরিকত্ব নিবন্ধীকরনের কাজ চলে তাহলে জনগণ মাথা পেতে নেবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যদি রাজনৈতিক দলীয় হস্তক্ষেপ হয় তাহলে জনগণের সম্পুর্ণ অধিকার রয়েছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করার। 


তিনি যে ভয় দেখালেন তা সম্পুর্ণ অগণতান্ত্রিক। নাগরিকত্ব আমার বংশ সুত্রে অধিকার। এই অধিকার নিয়ে যদি রাজনৈতিক ছেলেখেলা হয় তাহলে যে কোন মুল্যে এর প্রতিবাদ করব।


তাই অনুরোধ, আদালতের কোন কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করবেন না । কিন্তু রাজনৈতিক কোন ষড়যন্ত্র হলে ঘরে বসে থাকবেন না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মোকাবেলা করবেন। 

#রুহুল_কুদ্দুস

০২-১১-২০১৭

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ
  1. Thank you for your kind words! Is there anything specific you would like to know or discuss? I am here to help with any questions or information you need. Just let me know and I'll do my best to assist you.

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন