অন্ধকারে নিমজ্জিত ভারত

2 minute read
0
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা ব্যবসা করতে এসে সুকৌশলে রাজপাঠ কেড়ে নেয়। প্রায় দুই শত বৎসর ভারত শাসনের নামে ভারতের জনগণকে শোষণ, নির্যাতনের মাধ্যমে সম্পদ লুট করে নিজ দেশের প্রাচুর্যতার ভাণ্ডারকে ভরপুর করে নেয়। অবশেষে স্বাধীনতার নামে দ্বি-জাতি তথ্বের ভিত্তিতে দেশকে দ্বিখণ্ডিত করে ঘৃণা ভরা চীর শত্রু দুই রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। এই দেয়াতে ও তাদের কোন হাত ছিলনা। অখণ্ড ভারতের সর্বশ্রেণীর মানুষ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। আমাদের টাকায় আমার দেশে রাজা হিসাবে আরাম ও আয়েশে থাকার জন্য তারা কিছু সুযোগ সুবিধা আমাদেরকে ও দিয়েছে, যা গুলামীর নজরানা স্বরুপ।
অপরদিকে মোগলরা প্রায় হাজার বৎসর ভারতকে শাসন করে। ইংরেজদের সাথে তাদের শাসনের বিস্তর ফারাক ছিল। মোগলরা ভারতকে নিজ দেশ পরিগনিত করে এই দেশেই সুশাসন সহ ভারতের উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে। তাদের মাতৃভুমিতে নিয়ে যায়নি কানা-কড়িও। তাদের অর্জিত সকল সম্পদ ভারতের মাটিতে গ্রোতিথ ও প্রোথিত। আমৃত্যু ভারতে থেকে ভারতের মাটিতে রেখে গেছে তাদের সভ্যতা ও শ্রেষ্টত্বের নিদর্শন। যার ফল স্বরুপ আমরা পেয়েছি তাজমহল, লালকেল্লা, মোগল গার্ডেন, বাবরী মসজিদ সহ বিশ্ব সেরা অনেক ইমারত। যা ভারতের জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়ে কোটি কোটি টাকা আয়ের উৎস হিসাবে দাড়িয়েছে। এ গুলি ছাড়া আজ ভারতের ঐতিহ্যকে কল্পনা করা মুস্কিল।

ইংরেজরাও এই দেশে রেখে গেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী মনুমেন্টস গুলি। আজ যেখানে রয়েছে #রাষ্ট্রপতি_ভবন, সেটা ছিল #ভাইসরয়_হাউছ, আমাদের #সংসদ_ভবন,  গেটওয়ে অব ইণ্ডিয়া, কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউছ, বোম্বেতে রয়েছে #ভিটি_রেলষ্টেশন , মোম্বাই মহানগর পালিকা ভবন, তাজ হোটেল, ইণ্ডিয়া গেট, আরো কত কি ।

বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শুরু হয়েছে পরিবর্তনের নামে রাস্তা-ঘাট, রেলষ্টেশন সহ জায়গার নাম পরিবর্তন। কি এমন ঘটল যে এগুলির নাম পরিবর্তন না করলে ভারত জগত সভায় শ্রেষ্ট আসন লাভ করতে পারবেনা ? কেনই বা বেছে বেছে মোগল বা মুসলিম শাসকদের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে ? ইদানিং, তাজমহল ও লালকেল্লাকে নিশানা করে আরএসএস কর্তা সহ বিজেপির মন্ত্রী সাংসদ বিধায়করা বলে যাচ্ছেন যে ভারত শত্রুদের সকল ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে হবে। এবং ভারত শত্রু বলতে মুসলিম মোগল শাসকদের কথা বলে যাচ্ছে।

প্রকৃত অর্থে বা প্রকাশ্যে যারা ভারত শত্রু ছিল তারা ব্রিটিশ ইংরেজ। ভারতের নব্বই ভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন,তাদেরকে চেনেন কপটচারী রুপে। কিন্তু ব্রিটিশ পদলেহি আরএসএস ও তাদের সমর্থকরা মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে মুসলমান মোগল শাসকদের ভারত শত্রু আখ্যা দিয়ে ভারত বিভাজনের বিপজ্জনক খেলায় নগ্ন ভাবে মেতে উঠেছে। প্রমাণ স্বরুপ, তারা ঘুনাক্ষরেও ব্রিটিশ মনুমেন্টস বা তাদের রেখে যাওয়া স্মারক গুলি নিয়ে কোন অপলাপ করে না। প্রভুভক্তির এ এক নোংরা নিদর্শন।
মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরী করে ক্ষমতার অলিন্দে ঠিকে থাকার জন্য সংখ্যাগুরু জনগণকে হিন্দু রাষ্ট্রের দুঃস্বপ্ন দেখিয়ে, আজগুবি গল্প শুনানো হচ্ছে। এতে কিছু সাধারন মানুষ তাদের ফাঁদে পড়বে সত্যি। এই বিপজ্জনক বিভাজন কৌশল যদি বিনা বাধায় চলতে থাকে তাহলে ভারতের ঐক্য-সংহতি ভবিষ্যত সংকটে পড়বে। আজ রাজ্য আলাদা হওয়ার দাবী উঠছে,কাল ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
আশার কথা, এই সাড়ে তিন বছরে আরএসএসের দাপদাপানি, বিজেপি জুমলাবাজী আর অপশাসনে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বুঝে গেছে তারা আসলে কি চায়। তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ক্রমেই অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ধাবমান।
#রুহুল_কুদ্দুস
১৭-১০-২০১৭

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)